বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে ঠাণ্ডাজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এনিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই দক্ষিণের বাসিন্দাদের। শনিবার (২১ডিসেম্বর) বাংলাস্কুপের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান- বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকা কলাপাড়ায় শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপাকে পড়ছেন কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরাও। শনিবার সকাল থেকে উপকূলের আকাশ জুড়ে দেখা যায় ঘন কালো মেঘ। ভোর রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে পুরো উপকূল জুড়ে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার স্থানীয় কৃষক, নিম্নআয়ের মানুষ ও কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা। আবহাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই পটুয়াখালীর পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ০১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই পটুয়াখালীর পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ০১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সব মাছধরা ট্রলার সমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান- বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বাগেরহাটে গভীর রাত থেকেই শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকদের কাজ করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। শহরের মূল বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে গেছে। রিকশাচালক মালেক ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজে ভিজে রিকশা চালাচ্ছি, কিন্তু যাত্রীও কম। দিনে যা আয় করি, আজ তার অর্ধেকও হবে না। ভ্যানচালক মজিদ মিয়া বলেন, বৃষ্টিতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছে। মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ভোর রাত থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাগেরহাটে ১.২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খুলনা প্রতিনিধি জানান- খুলনায় নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি হয়েছে। মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও বৃষ্টির কারণে একটু কমেছে। শনিবার সকাল থেকে রোদ না ওঠায় শীত একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান- পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় সাতক্ষীরায় গভীর রাত থেকেই শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। শনিবার সকাল থেকে এই বৃষ্টির কারণে জনজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকদের কাজ করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। শহরের মূল বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে গেছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান- দক্ষিণের জনপদ ঝালকাঠিতে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। কনকনে ঠান্ডায় বয়ে চলা হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত কয়েক দিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশাস সাথে নতুন করে ভোগান্তি বাড়িয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা পরেছে চরম বিপাকে। শনিবার সকাল থেকে শীতের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা পিঠা বিক্রেতা বাবু বলেন, ঝালকাঠিতে তীব্র শীত পড়ছে। মানুষজন কম বের হচ্ছে। এতে বেচা-বিক্রি কম। তার উপর কষ্ট আরো বাড়িয়েছে বৃষ্টি। চরম ভোগান্তিতে রয়েছে শহরের মানুষ। স্থানীয় রিকশাচালক রহিম মিয়া, পেটের টানে শীত উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছি। তবে যাত্রী নেই বললেই চলে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/ এনআইএন/এসকে
সাগরে নিম্নচাপ, চার বন্দরে সতর্কতা